স্টাফ রিপোর্টার:: সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ-রাজনগর-মৌলভীবাজার সড়ক সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই প্রকল্পের মোটা অংকের টাকা লুটপাট হয়েছে। প্রকৌশলী, তার বন্ধু ও ঠিকাদার মিলেমিশে এই টাকা পকেটে ভরেছেন। সড়কের অনেক জায়গায় দায়সারা কাজ করে; এমনকি প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়কে কোনো কাজ না করেই প্রকল্পের চূড়ান্ত বিল অনুমোদন করেছেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) সিলেট সার্কেলের সদ্য বিদায়ী তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত। সেই বিল থেকে ইতিমধ্যে দেড় কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সওজ সিলেট অঞ্চলের সদ্য বদলি হওয়া তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উৎপল সামন্তের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। ২০২১ সালে সুনামগঞ্জে বিভিন্ন কাজে পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কাজ করানোর পর এবার সিলেটে কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শেষ না করেই বিল প্রদান নিয়ে তোলপাড় চলছে। পাশাপাশি সড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়মেরও অভিযোগ উঠেছে। সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর অনুমোদনের পর গত ২২ জুন সওজ ঢাকার রক্ষনাবেক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জিকরুল হাসান বিলে অনুমতিও দিয়েছেন।
জানা যায়, ২০২২ সালের ২২ আগস্ট সওজ সিলেট জোন থেকে এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা নামে এক ঠিকাদারের অনুকূলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট সড়কের উন্নয়নকাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এই কাজে সড়কের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন আইটেম যুক্ত রয়েছে। গত এক বছর কাজ চলমান অবস্থায় হয়েছে অনেক অনিয়ম। সড়কের কাজ করতে যেখানে বেইজমিক্স প্লান্ট বাধ্যতামূলক ছিল, বেশির ভাগ সময় সেখানে ড্রাম মিক্সড প্লান্ট ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন আইটেম অসম্পূর্ন রেখে গত ১৪ জুন সড়কের কাজের আইপিসি নম্বর ৪ ও চূড়ান্ত বিল অনুমোদন করা হয়। এ কাজের বিপরীতে পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকায় গত ২২ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরাকে চূড়ান্ত বিলের ৬ কোটি টাকার মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ দেখা গেছে, সড়কের কাজের কোনো কোনো অংশে বাইন্ডার কোর্স করে ওয়্যারিং কোর্স না করায় বাইন্ডার নষ্ট হয়ে খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি সড়কের প্রশস্ত করা অংশে বাইন্ডার করা হয়নি। শুধু বেইস টাইপ করে রাখা হয়েছে। প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিল নিয়ে গেছে। এছাড়া খাগড়াছড়ির এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরার নামে রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট সড়কের কার্যাদেশ দেওয়া হলেও মূলত কাজটি বাস্তবায়ন করেন সিলেটের জয়দ্বীপ দে পার্থ ও মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
সূত্র জানায়, জয়দ্বীপ দে পার্থ সিলেট সড়ক সার্কেলের সদ্য বদলি হওয়া তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উৎপল সামন্তের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। উৎপল সামন্ত সিলেট সড়ক সার্কেলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মকালীন সময়ে বিভিন্ন অনিয়মে তার সহযোগী ছিলেন ওই জয়দ্বীপ দে পার্থ। একইভাবে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ-রাজনগর-মৌলভীবাজার সড়ক সংস্কার প্রকল্পের কাজ বাকি রেখেই চূড়ান্ত বিল দেওয়ার সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জয়দ্বীপ দে পার্থর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত প্রকৌশলী উৎপল সামন্তের স্বাক্ষরেই বিলটি চূড়ান্ত অনুমোদন হয়।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত ও তার বন্ধু জয়দ্বীপ পার্থের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সিলেট সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওই প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। কাজে কোনো অনিয়ম হলে প্রকল্প পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’