স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রার্থী হয়েছেন। এ জন্য নির্বাচনে দলীয় কোন্দল, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে বিভক্ত দেখা দিয়েছে। তাই একে অপরকে ছাড় দিতে নারাজ। তৃতীয় ধাপে আগামী ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এতে চেয়ারম্যান পদে কাপ পিরিচ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম(বর্তমান চেয়ারম্যান)। আরেক প্রার্থী আনারস প্রতীকের আশফাকুল ইসলাম সাব্বির। এবার নির্বাচনে তিনি নতুন মুখ।
গত রোববার উপজেলার পিঠাইটিকর গ্রামে গণসংযোগ করেন সাব্বির। এ সময় বক্তব্যে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীর (নুরুল ইসলাম) বিভিন্ন সমালোচনামূলক বক্তব্যের কড়া জবাব দেন সাব্বির। সরাসরি নাম না বললেও তার বক্তব্য যে চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল ইসলামকে ইঙ্গিত করে, তা বুঝা গেছে।
সাব্বির বক্তব্যে বলেন, ‘ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলাবাসী আমার ডাকে যেভাবে সাড়া দিচ্ছেন, উৎসাহ দিচ্ছেন, তা আমার জীবনের পরম পাওয়া। অনেকে আমাকে লক্ষ্য করে গালাগালি করছেন, উস্কানি দিচ্ছেন। যারা আমাকে উদ্দেশ্য করে নানা কথা বলছেন, তারা আমার মুরব্বি। তাদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। তারা শিক্ষিত মানুষ, তারা আমাদের গালাগালি করলেও আমি মনে করি তারা আমাকে দোয়া দিচ্ছেন’।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলছি, ‘কেউ আমাকে গালি দিলে, ফেসবুকে খারাপ মন্তব্য করলে আপনারা নীরব থাকবেন। কাউকে কিছু বলবেন না। ২৯ মে গণজোয়ারের মাধ্যমে জনগণ এর জবাব দিবেন। মানুষকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে ভোট দিতে হবে, মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করতে হবে। এটাই তোমাদের দায়িত্ব। অনেকে টাকাকে ‘ফয়জুলাহ’ বলেন। আমার সেই ফয়জুলাহ নেই। টাকার নাম যারা এভাবে বিকৃত করেছেন, তাদের দাম্ভিকতা-অহংকার দেখে মনে হয় আমরা মানুষ নাই। খারাপ মানুষদের টাকা দিয়ে কেনা যায়। কিন্তু ফেঞ্চুগঞ্জের মানুষককে কেনা বড় দায়! যারা টাকার গরম দেখান, তারা টাকা দিয়ে কখনো মানুষের ভালোবাসা কিনতে পারবেন না। আমরা ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করব। মুখের ভদ্রতা দিয়ে, মানুষকে প্রতিশ্রিতি দিয়ে সেই প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন করা আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। আমরা কারো হুমকি-ধামকি ভয় করি না’।
গত শনিবার রাতে উপজেলার চানপুর এলাকায় এক উঠান বৈঠকে বক্তব্য দেন নুরুল ইসলাম। তিনি সাব্বির ও আরেক প্রার্থী সাব্বিরের চাচা আবদুল বাছিত টুটুলকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একই পরিবার থেকে দুজন প্রার্থী হয়েছেন। তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। তারা যদি নিজেদের দ্ব›দ্ব-সমস্যা সমাধান না করতে পারে, তাহলে আপনাদের (জনগণের) সমস্যা কিভাবে সমাধান করবে। অনেকে বলে ভোটকেন্দ্র জোর করে দখল করবে, যারা এরকম কথা বলে তারা কুলাঙ্গার। কেউ যদি মাস্তানি করতে আসে, আপনারা প্রতিহত করবেন। আপনারা মাস্তানি যদি প্রতিহত না করেন, তাহলে এই মাস্তানের হাত লম্বা হয়ে যাবে। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিবেন। কেউ যদি মাস্তানি করে, তার হাত ভেঙে দিবেন। আপনাদের কেউ আক্রমণ করলে আপনারা প্রতিহত করবেন। যা হওয়ার আমার হবে’।
আরেক বক্তব্যে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ‘ওই ছাত্রলীগের ছেলেদের আমি ঢাকায় নিয়ে গেছি। আজ বুঝি সন্ত্রাস। সন্ত্রাস যারা সৃষ্টি করেছে, তাদের আমি প্রতিহত করেছি। আপনারা ভয় পাবেন না, ভোট দিতে যাবেন। সন্ত্রাসী কার্যক্রম কেউ করলে তা প্রতিহত করে দাঁত ভাঙা জবাব দিবেন। যে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা আমার কাছ থেকে পাবেন’।
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, এবার নির্দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন হওয়ায় প্রার্থীদের কাছে সাধারণ ভোটারদের কদর অনেকটাই বেড়েছে। তাই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাড়া-মহল্লায় কর্মীসভা, উঠান বৈঠক, মতবিনিময়ের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা। তবে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী একে অপরকে ইঙ্গিত করে এভাবে বক্তব্য দিতে থাকলে ভোটের মাঠে উত্তাপ বাড়বে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাছিত টুটুল চেয়ারম্যান পদে মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তিনি সাব্বিরের চাচা। এছাড়া অন্য প্রার্থীরা হলেন, জহিরুল ইসলাম মুরাদ(ঘোড়া) ও সুলতানা রাজিয়া ডলি(দোয়াত কলম)।