রুমেল আহসান:: ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ভোটাররা ‘মর্যাদার লড়াই’ হিসেবে দেখছেন। একদিকে একই গ্রামের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান একই পদে প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতা চাচা-ভাতিজা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রার্থীদের সমর্থনে দ্বিধা-বিভক্ত। ফলে লড়াইটা আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া ওই চার প্রার্থীই ফেঞ্চুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা।
ফেঞ্চুগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনের সবার চোখ উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের দিকে। উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম(কাপ পিরিচ), জাহিরুল ইসলাম মুরাদ(ঘোড়া), আব্দুল বাছিত টুটুল(মোটর সাইকেল), আসফাকুল ইসলাম সাব্বির(আনারস) ও এডভোকেট সুলতানা রাজিয়া ডলি(দোয়াত কলম)।
নুরুল ও মুরাদ উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা। ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নুরুল চেয়ারম্যান হিসেবে ও মুরাদ ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনে দুজনেই চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। একে অপরের পথের কাঁটা হচ্ছেন কিনা তা জানা যাবে ২৯ মে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আওয়ামী ঘরানার মানুষ। ২০১৯ সালে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের একটি অংশের ভোট ভাগিয়ে নেন নুরুল ইসলাম। ১৯৯১ সালেও চেয়ারম্যান নির্বাচিত নুরুল ইসলাম এবারের নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থী। সালিশ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি থাকায় নুরুলের সঙ্গে ভোটের লড়াই অন্য সকল প্রার্থীকেই করতে হবে বলে ধারণা ভোটারদের। টানা দ্বিতীয় বারের মতো জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী প্রবীণ এই নেতা।
মুরাদ একটানা ১৫ বছর ফেঞ্চুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৮ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ধানের শীর্ষ প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মুরাদ। নির্বাচনে পরাজিত হলে মুরাদ ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন। এবারের নির্বাচনে মুরাদ চেয়ারম্যান প্রার্থী। ইউপি সদস্য থেকে জনপ্রতিনিধি জীবনে পর্দাপণ করা মুরাদ চমক দেখিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে চান। একই গ্রামের প্রতিদ্বন্দ্বি থাকা সত্ত্বেও তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। জাহিরুল ইসলাম মুরাদ বলেন, জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিলেন। জনগণের কল্যাণে আমি কাজ করেছি। ইনশাআল্লাহ জনগণ আমাকে মূল্যায়ন করবেন।
আরেক দুই প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছিত টুটুল ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসফাকুল ইসলাম সাব্বির। সম্পর্কে টুটুলের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে সাব্বির। দুই প্রজন্মের সম্পর্ক হলেও উপজেলার সবাই তাদের আপন চাচা-ভাতিজা মনে করেন। এ অবস্থায় কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। তাই ভোটের মাঠে আলোচনায় চাচা-ভাতিজার ভোটযুদ্ধ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও টুটুলকে রেখে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা সাব্বিরের পক্ষে সরাসরি প্রচারণা, সভা ও সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। টুটুল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য। তিনি ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় কোন্দলের কারণে ভরাডুবি হয় তার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
অন্যদিকে টুটুলের ভাতিজা দলীয় কোনো পদে নেই। তার পক্ষে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন চেয়ারম্যান মাঠে তৎপর। এবারের নির্বাচনে নতুন মুখ সাব্বির চমক দেখাতে চান। টুটুলের নির্বাচনী মাঠে পথের কাাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন ভাতিজা। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সাবেক এই দুই ছাত্রলীগ নেতা। তবে নিজেদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ভোট ভাগাভাগি হলে সুযোগ নিতে পারেন অন্য দুই প্রার্থীরা। আসফাকুল ইসলাম সাব্বির বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে শুরু আমার। রাজপথের পরীক্ষিত কর্মী আমি। এই এলাকার মানুষ পরিবর্তন চায়, উন্নয়ন চায়। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সহযোদ্ধা, অগ্রজ, কর্মীরা আমার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনে আমি জিতব ইনশাআল্লাহ।
নির্বাচনে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতানা রাজিয়া ডলি প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে নিষ্ক্রিয়। নির্বাচনী মাঠে তিনি নেই। পিঠাইটিকর গ্রামের ভোটার আনিসুর রহমান বলেন, একই গ্রামে দু’জন ও চাচা-ভাতিজা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। তাই নির্বাচনে কে বিজয়ী হবেন এনিয়ে মানুষের মধ্যে চলছে জল্পনা-কল্পনা। ভোটাররা মনে করেন এই নির্বাচন তাদের মান-মর্যাদার লড়াই।
আগামী ২৯ মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলায় পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার ৮৮ হাজার ৫৫১ জন।