রুমেল আহসান: নেমেছে বন্যার পানি। কিন্তু রেখে গেছে ক্ষতচিহ্ন। বন্যায় ভেঙে যাওয়া সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল প্রায় দুই মাস। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেখানে নীরব, সেখানে সরব এলাকাবাসী। সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে যেখানে সমাপ্ত, সেখানে হাতে ইট ও কুড়াল, কাঁধে বস্তাভর্তি বালু নিয়ে ভাঙন মেরামতে সেচ্ছাশ্রমে এগিয়ে এসেছে এলাকাবাসী।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে দুটি সড়কের ভাঙনে প্রায় দুই মাস সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে নদী তীরবর্তী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম মল্লিকপুর ও ইলাশপুর এলাকায় সড়কে ভাঙন দেখা দেয়। এতে ফেঞ্চুগঞ্জ-গোলাপগঞ্জ সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন হাজার হাজার মানুষ।
সড়ক সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক এগিয়ে না আসলেও এক ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে বদলে গেছে সড়ক ভাঙনের চিত্র। স্থানীয় এলাকাবাসীর সেচ্ছাশ্রমে দুই মাস পর সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে দুই লক্ষ টাকার ইট দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
জানা যায়, গত ১২ জুন ফেঞ্চুগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। অতিবৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেঞ্চুগঞ্জে উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। বন্যার পানিতে ফেঞ্চুগঞ্জ-গোলাপগঞ্জ সড়কের দুটি এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। তীব্র স্রোতে সড়কে প্রায় ১৫-২০ ফুটের মতো গভীর নালা সৃষ্টি হয়। এরপর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বন্যার পানি একটু কমতে শুরু করলে উপজেলার ৪নং উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহমেদ জিলু উদ্যোগ নেন সড়কের ভাঙন সংস্কারের। তাঁর এই মহৎ উদ্যোগে সাড়া দেন এলাকাবাসী। দীর্ঘ এক মাস সেচ্ছাশ্রমে সড়ক মেরামত করেন স্থানীয়রা। অবশেষে স্বাভাবিক হয় সড়ক যোগাযোগ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ফেঞ্চুগঞ্জের ইলাশপুর রেলক্রসিং এলাকায় সড়কের ভাঙন মেরামতে বাঁশ ও গাছের খুঁটি দিয়ে সড়কের দু’পাশে পাইলিং করা হয়েছে। সড়কে ইট ও বস্তাভর্তি বালু ফেলা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান জিলুর এই উদ্যোগে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রায় দুই লক্ষ টাকার ইট দেন। দীর্ঘ এক মাস এলাকাবাসীর অক্লান্তিক প্রচেষ্টায় ভাঙন মেরামত করা হয়। এ ফলে স্বাভাবিক হয় সড়ক যোগাযোগ।
সরেজমিনে পশ্চিম মল্লিকপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কুশিয়ারা নদীর তীর উপচে বন্যার পানিতে ভেঙে যাওয়া সড়কের বেহাল অবস্থা। এলাকার কয়েকজন যুবক সেচ্ছাশ্রমে বস্তাভর্তি বালু ও ইট ফেলছেন সড়কে। সড়কের নদীর তীরে গাছের খুটি দিয়ে বল্লী গেড়ে পাইলিং করা হয়েছে। দীর্ঘ এক মাস ধরে এভাবে কাজ করছেন ইউপি চেয়ারম্যান জিলু ও স্থানীয় যুবকরা।
ফেঞ্চুগঞ্জ-গোলাপগঞ্জ সড়কে অটোরিকশা (সিএনজি) চালক তানভীর আহমদ বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জে সড়কের ভাঙনের কারণে যান চলাচল বন্ধ ছিল। দক্ষিণ সুরমার পাহাড় লাইন সড়ক দিয়ে যাত্রীদের গোলাপগঞ্জ নিয়ে যেতাম। এতে যাত্রীদের ও আমরা চালকদের ভোগান্তি পোহাতে হতো। দীর্ঘ জায়গা গাড়ি চালিয়ে যেতাম, কিন্তু ভাড়া কম পেতাম।
পিকআপ চালক মবশ্বি আলী বলেন, গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বর ও ঢাকা দক্ষিণ বাজারে গাড়িতে করে দোকানে মালামাল দিয়ে থাকি। ইলাশপুর ও পশ্চিম মল্লিকপুর সড়ক ভাঙনের ফলে দীর্ঘদিন এইসব বাজারে মালামাল নিয়ে যায়নি। গত কয়েকদিন আগে ইলাশপুর এলাকায় সড়কের ভাঙন মেরামত হওয়ায় মালামাল নিয়ে ভাদেশ্বর বাজারে যাচ্ছি।
উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহমেদ জিলু বলেন, সড়ক দুটি মেরামতে কেউ নগদ টাকা, কেউ বস্তা, ইট ও বালু দিয়ে সাহায্য করেছেন। এছাড়াও সড়কের দু’পাশে গাছের খুঁটি দিয়ে পাইলিং করা হয়েছে। যাতে সড়ক ধেঁবে না যায়। এই পর্যন্ত সড়ক দুটি মেরামত করতে ৭ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম প্রায় দুই লক্ষ টাকার ইট দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বন্যায় সড়ক দুটি ভেঙে যাওয়ায় ফেঞ্চুগঞ্জ-গোলাপগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ভোগান্তি দূও করতে আমার এলাকাবাসী সেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে শুরু করি। গত দুই সপ্তাহ আগে ইলাশপুর এলাকায় ভাঙন সংস্কারের ফলে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। পশ্চিম মল্লিকপুর এলাকায় আজকালের মধ্যে সড়ক দিয়ে যান চলাচল উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।