সিলেটের কিনব্রিজকে পদচারী সেতু করার উদ্যোগ আবারও স্থগিত হয়েছে। সিলেট জেলা প্রশাসন দক্ষিণ সুরমা এলাকাবাসীসহ রাজনৈতিক ও পরিবহন নেতৃবৃন্দের প্রতিবাদের মুখে কিনব্রিজ দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের প্রস্তাবনা স্থগিত রেখেছে।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজ দিয়ে গাড়ি চলাচল আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। কেবল মোটর সাইকেল চলাচল করতো এ সেতু দিয়ে। গত ৯ সেপ্টেম্বর এই সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করার কথা জানিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সারওয়ার আলম। খবরটি প্রকাশের পর দক্ষিণ সুরমার ২৫, ২৬ ও ২৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাসহ বিভিন্ন স্তরের জনগণ এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তাদের বিরোধিতায় দুইদিনের মাথায় এই সিদ্ধান্ত থেকে প্রশাসনকে সরে আসতে হয়েছে।
১১ সেপ্টেম্বর সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম জানান, জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে এই মুহূর্তে কিনব্রিজে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হবে না। তবে, শিগগিরই ব্রিজ থেকে ভাসমান হকার উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ সুরমাবাসী জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান করে ব্রিজে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানান। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, কিনব্রিজ সুরমার দুই তীরের জনগণের জন্য যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ পথ। ব্রিজে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ হলে শিক্ষার্থী, কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হবেন।
স্মারকলিপি গ্রহণের পর জেলা প্রশাসক স্থানীয় রাজনৈতিক ও পরিবহন নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সভায় সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপ, ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন এবং অন্যান্য পরিবহন নেতৃবৃন্দ কিনব্রিজে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের প্রস্তাব বাতিলের জন্য অনুরোধ জানান। বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও এ দাবিকে সমর্থন করেন। এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম কিনব্রিজে মোটরসাইকেল চলাচল আপাতত বন্ধ না করার ঘোষণা দেন। তবে, হকার উচ্ছেদে শিগগির পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
১ হাজার ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সেতুকে পদচারী সেতু বানানোর উদ্যোগ এর আগেও নেওয়া হয়েছিল। সিটি করপোরেশন এবং সড়ক ও জনপথের পক্ষ থেকে আগে দুইবার এ উদ্যোগ নেওয়া হলে স্থানীয়দের আপত্তির মুখে সফল হওয়া যায়নি।
সিলেট অঞ্চলের প্রথম সেতুর নাম কিনব্রিজ। সুরমা নদীর সিলেট নগরীর অংশে লোহার কাঠামোয় তৈরি এ কিনব্রিজ। ২০১৯ সালে ঐতিহ্যের এই সেতুটিকে সংরক্ষণ করতে এই সেতু দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে ওই বছরের ৩১ আগস্ট মধ্য রাতে কিনব্রিজের উভয় প্রবেশপথে লোহার বেষ্টনী লাগিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেতুর সামনে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লিখা সাইনবোর্ড টানানো হয়। শুধুমাত্র পথচারীরা সেতুটি ব্যবহার করার সুযোগ পান।
তবে কিনব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর সেতুর দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাদের যাতায়াত সুবিধার জন্য এ সেতু দিয়ে যান চলাচল অব্যাহত রাখার দাবি জানান। কিছুদিন পর কিনব্রিজের উভয় প্রবেশপথে লাগানো লোহার বেষ্টনী ভেঙে রিকশা চলাচল শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে প্রায় পুরো বেষ্টনীই গায়েব হয়ে যায়।
এরপর ২০২৩ সালের সংস্কারের পর সেতুটিতে যান চলাচল বন্ধ রেখে শুধু পায়ে হাঁটার জন্য উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে পরে মোটর সাইকেল চলাচলেরও সুযোগ দেওয়া হয়।
সিলেট নগরীর বুক চিঁরে যাওয়া সুরমা নদীর উত্তর ও দক্ষিণ পারের বাসিন্দাদের যোগাযোগ সুগম করতে ১৯৩৩ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয় কিনব্রিজের। ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। লোহা দিয়ে তৈরি এর আকৃতি অনেকটা ধনুকের মতো, যার দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট। আসাম প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামে সেতুর নামকরণ হয় কিনব্রিজ। ধীরে ধীরে সিলেটের পরিচিতির অংশ হয়ে ওঠে সেতুটি। বর্তমান পর্যটননগরী সিলেটে পর্যটকদের প্রিয় একটি স্থান হলো এই কিনব্রিজ। এই ব্রিজের পাশে দাঁড়িয়ে একটি ছবি তুলেই পর্যটকরা সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে জানান দেন তারা সিলেটে এসেছেন।