রুমেল আহসান:: পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে সিলেট মহানগরীতে। প্রতিনিয়ত নানাভাবে দুষণ হচ্ছে পরিবেশ। বর্জ্য অব্যবস্থাপনা, মারাত্মক শব্দ দূষণ, পুকুর জলাশয় দিঘী ভরাট এবং পাহাড় টিলা কাটার হুমকির মুখে দাঁড়িয়েছে সিলেটের পরিবেশ।
জানা গেছে, প্রতিদিন ময়লা আবর্জনা দুষিত করছে সিলেট মহানগরীর পরিবেশ। সিটি করপোরেশনের ৯০টি ডাস্টবিন ছাড়াও বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ও রাস্তার মোড়ে জমে থাকা ময়লার স্তুপ দূষিত করে তোলছে নগরীর পরিবেশ।
খোদ সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, মহানগরীর ৪০ ভাগ বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হয় না। সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুধাময় মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন ১৮০ থেকে ২০০ মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদন হয় নগরীতে। এরমধ্যে ডাম্পিং করা সম্ভব হয় ১২০ থেকে ১৪০ মেট্রিক টন বর্জ্য।
তবে বর্জ্য ডাম্পিং নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের ভয়াবহ তথ্য হলো, মহানগরীর এ বর্জ্য মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে হাওরের পানিতে। সিলেটের দক্ষিণসুরমার লালমাটিয়া এলাকার হাওরাঞ্চলে প্রতিদিন ফেলা হয় মহানগরীর বর্জ্য। যা থেকে দূষিত হচ্ছে সিলেটের পরিবেশ। হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য জীববৈচিত্র।
এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভাগের অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘হাওরের পানিতে বর্জ্য ফেলার মাধ্যমে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ চলছে সিলেটে। ’
‘যে প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে মহানগরীর বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক’ বলে মনে করেন এ অধ্যাপক।
তিনি জানান, ‘এতে একসঙ্গে বায়ু, পানি ও মাটি দূষণ হচ্ছে। বিষাক্ত কেমিকেলযুক্ত ময়লা পানি ছড়িয়ে পড়ছে খাল বিল ও নদীতে। মরে যাচ্ছে জলজ প্রাণী। মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে মাটি। এছাড়া এই বর্জ্য থেকে বায়ু দূষণের মাধ্যমে আক্রান্ত হচ্ছে পশুপাখি এমনকি নানা রোগব্যাধি ছড়াচ্ছে মানুষের দেহেও। ’
সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘প্রত্যেক বর্জ্যই সম্পদ। এটা রিসাইকেলিং করে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন সম্ভব। ’
তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বই বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন করছে। ব্রাজিল কেবল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার আয় করছে। সিলেট সিটি করপোরেশনও বৈজ্ঞানিক পদ্বতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করলে প্রচুর নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন করতে পারবে’।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনে মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জায়গা নির্ধারণ করলেও নানা জটিলতায় এখনো তা কার্যকর হয়নি। কয়েকটি স্থান বিবেচনা করা হলেও আপত্তির কারণে জায়াগা পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে সম্প্রতি জেলা প্রশাসনকে জায়গা বের করে দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মেয়র।